শরীয়তপুর জেলার আওতায় জাজিরা শাখা মাটি সমিতির সদস্য হেলেনা বেগম। স্বামী মোঃ আঃ সাত্তার মোড়ল পেশায় একজন ব্যবসায়ী। দুই ছেলে নিয়ে ৪ সদস্যের সংসার হেলেনা বেগমের। স্থানীয় বাজারে মুদি দোকানে বিভিন্ন পন্য বিক্রয় করে তাঁদের সংসার চলতো।

পৈতিকভাবে দুই একর ফসলি জমির মালিক হেলেনা বেগমের স্বামী। জমি নিচু হওয়ায় একবারের বেশি ফসল হয় না। এতে করে তাঁদের চার সদস্যের সংসার চালানো অনেক কঠিন হয়ে পড়েছে। তাই হেলেনা বেগম স্বামীর কাজের পাশাপাশি বাড়তি আয় করার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করেন। কিন্তু কিভাবে কী করবেন সেটি তিনি বুঝে উঠতে পারছিলেন না। একদিন তার এক আত্নীয়র কাছ থেকে এসডিএস এর সমিতি সম্পর্কে তিনি জানতে পারেন। এরপর ঐ এলাকায় এসডিএস’র সমিতি মিটিং এ উপস্হিত হন। সবকিছু শুনে মাঠ কর্মীর সহায়তায় ২০১৯ সালে সমিতিতে ভর্তি হয়ে সঞ্চয় জমা করতে থাকেন হেলেনা বেগম। পরবর্তীতে এসডিএস এর জাজিরা শাখা থেকে চল্লিশ হাজার (৪০,০০০) টাকা লোন নিয়ে স্বামীর সাথে পরামর্শ করে এক ফসলি নীচু জমির কিছু অংশ খনন করে একটি পুকর তৈরি করেন। সেখানে এসডিএস’র মৎস্য কর্মকর্তা মোঃ আনোয়ার হোসেনের পরামর্শ নিয়ে মাছ চাষাবাদ শুরু করেন ।

প্রথমে প্রস্তত পুকুরে মাছের পোনা মজুদ করেন। এরপর পুকুরে মাছের খাদ্য প্রয়োগ এবং পরিচর্যা করেন। মাছ দ্রুত বড় এবং তা বাঁজারে বিক্রি করেন। এতে সব খরচ বাদ দিয়ে মাছ চাষে বেশ লাভ হয় তার। দ্রুত লাভ হওয়ায় আরও বেশি করে মাছ চাষের আগ্রহ জন্মে হেলেনা বেগমের। সম্ভাব্যতা যাচাই করে এসডিএস এর বাস্তবায়নাধিন পিকেএসএফ এর অর্থায়নে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ ইউনিট আওতায় ভিয়েতনাম পাঙ্গাস-কার্প মিশ্রচাষ প্রযুক্তিতে মাছের পোনা এবং উপকরন সহায়তা প্রদান এবং এসডিএস থেকে প্রশিক্ষন এবং মাছচাষে সহায়তার বিষয় সম্পর্কে তাকে জানানো হয়।

হেলেনা বেগম স্বামীর সহযোগিতায় এসডিএস থেকে দ্বিতীয় পর্যায়ে এক লক্ষ টাকা ঋণ নিয়ে নীচু দুই শতাংশ জমি খনন করে সমস্ত জমিটাতেই পকুর তৈরী করেন। পুকুর প্রস্তুত করে হেলেনা বেগম ৭০০০ টি ভিয়েতনাম পাঙ্গাস এবং ৫০০০টি কার্পজাতীয় মাছের পোনা ছাড়েন। নিয়মিত খাদ্য প্রদান এবং পরিচর্যা করতে থাকেন। মাছ লালন পালন করে স্হানীয় এবং ঢাকায় মাছের আড়তে বিক্রয় করতে থাকেন। এতে ১০ মাসে মোট ১২,০০০ কেজি মাছ বিক্রয় করে ১৩,৫০,০০০ টাকা আয় হয়। এছাড়া পুকুর পাড়ের সবজী এবং কলা বিক্রয় করে আয় করেন আরও ৩৫০০০ টাক। মাছ,কলা ও সবজী চাষে খরচ তার হয়েছে ৮,৭০,০০০ টাকা। খরচ বাদ দিয়ে তার মুনাফা পেয়েছে ৫,১৫,০০০টাকা। এছাড়াও তার পুকুরে বিভিন্ন প্রজাতির ৩০০ কেজির অধিক মাছ রয়েছে। হেলেনা বেগম এবং তার স্বামী এলাকায় এখন সফল মৎস্যচাষী হিসেবে সকলের কাছে পরিচিতি। এলাকার আগ্রহী ক্রেতারা এখন হেলেনা বেগমের পুকুর থেকে মাছ ক্রয় করেন। মাছ চাষের লাভের টাকা দিয়ে তিনি একটি গরু ক্রয় করেছেন।হেলেনা বেগম এর সংসারে এখন স্বচ্ছলতা ফিরে এসেছে। হেলেনা বেগম তার জীবনের মোড় ঘুরিয়ে আয়ের পথ তৈরির জন্য এসডিএস এর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

Pin It on Pinterest